চট্টগ্রাম সংবাদদাতা :
পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, নগর পরিচ্ছন্নতার মতোই এবার রমজানের প্রথম দিন থেকে বাজারগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হবে। এ সময় তার সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন এবং কেউ ওজনে কম দিলে বা পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়ালে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এ অভিযান শুধু একদিনের জন্য নয়, বরং পুরো রমজান মাস জুড়ে চলবে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) চসিকের রাজস্ব বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত এক যৌথ সভায় মেয়র এসব কথা বলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশে রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো হয়, অথচ বাংলাদেশে ঠিক তার উল্টোটা ঘটে। রমজান এলেই বাজারের মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। সংযমের এই মাসেও যদি আমরা নৈতিক চরিত্র ঠিক রাখতে না পারি, তবে আর কোনো সুযোগ নেই। ইসলাম আমাদের ন্যায্য ব্যবসা ও সততার পথ অনুসরণ করতে শেখায়, কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফার লোভে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা অত্যন্ত অনৈতিক।”
সভায় উপস্থিত বিভিন্ন প্রতিনিধিরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে রয়েছে, বাজারে অবৈধভাবে বসা হকারদের উচ্ছেদ, প্রতিটি দোকানে পণ্যের সঠিক মূল্য তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, যাতে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে কোনো অনিয়ম না হয়। এছাড়া, সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়, যাতে কোনো পণ্যের সংকট তৈরি না হয় এবং অযৌক্তিকভাবে দাম না বাড়ে। পাশাপাশি, আমদানি পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, যানজট কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ক্রেতাদের ন্যায্য ওজন নিশ্চিত করাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এছাড়া, চলমান খাল উদ্ধার ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানের প্রসঙ্গেও মেয়র কঠোর অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, “আমরা চকবাজারসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। তবে কিছু অসাধু ব্যক্তি পুনরায় জায়গা দখলের চেষ্টা করছে। সন্ধ্যার পর তারা দোকান বসিয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। আমরা বারবার উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছি, তবে এলাকাবাসীকেও দায়িত্ব নিতে হবে। যদি কেউ জোরপূর্বক জায়গা দখল করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।”
তিনি আরও হুঁশিয়ার করে বলেন, “যদি কোনো অসাধু চক্র সশস্ত্র হয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে, তাহলে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামালসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চসিকের এই উদ্যোগ নগরবাসীর জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে, যা রমজান মাসে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
Leave a Reply