শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ০৫:২৬ পূর্বাহ্ন
Title :
ঝিনাইদহে এনসিপির পদযাত্রা ও পথসভা অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেল উপহারের আম ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্নের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার দুর্ঘটনায় আহত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন চিকিৎসা অনুদান দেবে সরকার সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষকে ছাত্রনেতৃবৃন্দের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন যশোরে ভুয়া ডাক্তার আটক করে কনস্টেবল সোহেল পেলেন নাগরিকবান্ধব দক্ষতা পুরস্কার নিজের ভুলে স্বপ্নভঙ্গ: চান্স পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলেন না ভ্যানচালকের মেয়ে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ২৮৬ রান ভোটের তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি, যথাসময়ে জানানো হবে: সিইসি মোংলায় জমি দখল মামলায় পৌর বিএনপির সদস্য সচিব মানিকসহ চার ভাই কারাগারে

রাতের আঁধারে গাছ কাটছে চক্র, সংরক্ষিত বন উজাড়

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫, ৯.২০ অপরাহ্ণ
  • ৭৮ বার

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

নামেই সংরক্ষিত বন, কিন্তু কার্যত দখলদারদের কবলে পড়ে এটি যেন ব্যক্তি মালিকানাধীন বনভূমিতে পরিণত হয়েছে। রাতের আঁধারে একের পর এক গাছ কেটে পাচার করছে বনখেকো চক্র। কোনো কোনো গাছ তাৎক্ষণিক পাচার করা হলেও কিছু গাছ বনেই ফেলে রাখা হয়, পরে সুযোগ বুঝে সরিয়ে ফেলা হয়।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরযমুনা সংলগ্ন মাঝেরচরের সংরক্ষিত বন দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই উজাড় করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বন উজাড়ের পাশাপাশি দখলদাররা বনভূমির জমি দখল করে মাছের ঘেরের আয়তন বাড়াচ্ছে। কিন্তু সবকিছু জেনেও বন বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করছে।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, গাছ কাটার আলামত লুকাতে কোথাও গাছের গোড়া মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে, আবার কোথাও শিকড়-বাকড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গাছগুলো একসঙ্গে পাচার করা সম্ভব না হলে আশপাশের পুকুর ও মাছের ঘেরে লুকিয়ে রাখা হয়। পরে সুযোগ বুঝে সরিয়ে ফেলা হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কেউ প্রতিবাদ করলে তার বাড়ির পুকুর কিংবা মাছের ঘেরে কাটা গাছের টুকরো ফেলে দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়। চরযমুনার একটি ঘের পরিচালনাকারী হাবিবুর রহমান বলেন, “আমার ঘেরে ৩০-৩৫টি কাটা গাছ ফেলে রাখা হয়েছে। এর কারণে আমার ঘেরের অনেক মাছ মারা গেছে। আমি এর বিচার চাই।”স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী জাকারিয়া বলেন, “এই সংরক্ষিত বন আমাদের ঢাল স্বরূপ। এটি ঝড়-বন্যার মতো দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। কিন্তু এখন প্রতিনিয়ত গাছ কেটে বন ধ্বংস করা হচ্ছে। বন উজাড় হলে পাখি থাকবে না, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের সবাইকে বন রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।”

এলাকাবাসীর দাবি, সংরক্ষিত বনভূমির জমি দখল করে ঘেরের আয়তন বাড়াচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল। অভিযোগ রয়েছে, জুয়েল সিকদার নামে এক ব্যক্তি বনের জমি দখল করে মাছের ঘের সম্প্রসারণ করছেন।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “২০২০ সাল থেকে বনায়ন ধ্বংসের মাত্রা বেড়েছে। সেই সময় জুয়েল সিকদার আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় বন দখল করে ঘের করেছিলেন। এখন বিএনপির ছত্রছায়ায় আবার বনের জমি দখল করে নতুন বাঁধ নির্মাণ করছেন। বন উজাড়ে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।”

চরযমুনা গ্রামের সমাজকর্মী মামুন মাঝি বলেন, “২০২০ সালে জুয়েল সিকদার প্রায় দেড় একর বনভূমি দখল করেছিলেন। এবারও ৩০-৪০ ফুট বনভূমির ভেতরে বাঁধ নির্মাণ করেছেন। বনের মধ্যে ভেকু দিয়ে নালা কেটে ঘেরের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছেন।”

তবে অভিযুক্ত ঘের মালিক জুয়েল সিকদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি প্রকাশ্যেই মাটি কেটেছি, কেউ তখন কিছু বলেনি। আমার ঘেরের মধ্যে কোনো গাছ নেই, কেউ প্রমাণ দিতে পারলে দেখাক। আমাদের জমি রেকর্ডভুক্ত ও বন্দোবস্ত নেওয়া।”

বন বিভাগের রাঙ্গাবালী রেঞ্জের কানকুনিপাড়া ফরেস্ট ক্যাম্পের কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র মজুমদার বলেন, “বনের মধ্যে নতুন নালার অস্তিত্ব দেখা গেছে। মাটি কাটার জন্য ভেকু মেশিনের ব্যবহারও ধরা পড়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকবাল হাসান বলেন, “সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল করে ঘের নির্মাণের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। দখলকৃত বনভূমি উদ্ধারের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম জানান, “অবৈধভাবে গাছ কাটা ও জমি দখলের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে রেঞ্জ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭০-৮০ দশকে গড়ে ওঠা এই সংরক্ষিত বনায়ন জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি পাখিদের অভয়াশ্রম এবং উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করে। বন উজাড় বন্ধে কঠোর নজরদারি ও দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

Please Share This Post in Your Social Media

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

Footer Widget

Footer Widget

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2019, All rights reserved.
Design by Raytahost.com