বগুড়া (শিবগঞ্জ) সংবাদদাতা :
এক গাছে ফলছে দুই সবজি—নিচে আলু, উপরে টমেটো। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা চৌকিরঘাট এলাকার কৃষক রুবেল মিয়া এমনই এক অভিনব চাষাবাদে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। কৃষি বন্ধু এগ্রো সার্ভিসেস-এর সহযোগিতায় তিনি সফলভাবে চাষ করেছেন ‘টমআলু’—একই গাছে আলু ও টমেটোর যুগল ফসল।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাছের উপরের ডগায় লাল টুকটুকে টমেটো ঝুলছে, আবার মাটি থেকে গাছ উপড়ে ফেললেই দেখা মিলছে তাজা আলুর। সবুজ পাতার ফাঁকে লাল ও সবুজ টমেটো নজর কাড়ে যেকোনো দর্শকের। প্রথম দেখায় এটিকে শুধুই টমেটো ক্ষেত মনে হলেও, বাস্তবে এটি এক গাছে দুই ধরনের সবজির সফল সংমিশ্রণ।
রুবেল মিয়া জানান, শখের বসে তিন শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে এই টমআলুর চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো পাওয়ার পাশাপাশি খরচও তুলনামূলক কম হয়েছে বলে জানান তিনি।
এই চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুর রহমান পাপ্পু বলেন, “আলুর শেকড় থেকেই আমরা আলু সংগ্রহ করছি। অন্য শিকড় অক্ষত থাকায় পরে ওই গাছ দিয়েই টমেটোর পূর্ণ ফসল পাওয়া যাচ্ছে। এতে এক গাছ থেকেই ১ কেজি আলু ও ৪-৫ কেজি পর্যন্ত টমেটো উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। একই খরচে দু’টি ফসল মিলছে, যা কৃষকের জন্য লাভজনক।”
এই পদ্ধতিতে মূলত আলু গাছের উপরের অংশ কেটে সেখানে টমেটো চারা ‘গ্রাফটিং’ করে লাগানো হয়। পরে সঠিক পরিচর্যায় গড়ে ওঠে টমআলু গাছ।
টমআলুর জমি দেখতে এসেছিলেন স্থানীয় রুহুল আমিন, সাত্তার, দুলাল ও শফিকুলসহ অনেকে। তারা বলেন, “এই প্রথম এমন চাষাবাদ দেখলাম। এক গাছে দুই ফসল সত্যিই বিস্ময়কর। শিখতে এসেছি, ভবিষ্যতে আমরাও চাষ করব।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল হান্নান বলেন, “শিবগঞ্জ একটি শস্যভাণ্ডার এলাকা। এখানকার উর্বর মাটিতে সব ধরনের ফসল সহজেই মানিয়ে নেয়। কৃষক রুবেলের এই সাফল্যকে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং ভবিষ্যতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।”
বাংলাদেশে কৃষির নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে রুবেল মিয়ার এই টমআলু চাষ, যা আগামীর কৃষিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের আশা জাগায়।
Leave a Reply