যশোর প্রতিনিধি :
‘ক’ লিখতে কলম ভাঙ্গে, পেরোয়নি মাধ্যমিকের গন্ডি। হাতে বুম, গলায় ক্যামেরার নিয়ে ছুটে বেড়ান সর্বত্র। পরিচয় দেন বিরাট বড় মাপের সাংবাদিক। তাদের টার্গেট সরকারি বড় বড় প্রতিষ্ঠান। তথ্য প্রমাণ ছাড়াই রেজিষ্ট্রেশন বিহীন অনলাইন পোর্টাল বা ফেসবুক পেইজে লিখে দেন মনগড়া দু-চার কথা। সেগুলো আবার পাঠানো হয় কর্মকর্তাদের হোয়াটসএ্যাপ নাম্বারে। এরপর শুরু হয় হাম্বি-তাম্বি। ভয়ভীতি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের নাম ভাঙ্গিয়ে আদায় করেন মোটা অঙ্কের টাকা। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের নামে আদায় করেন টাকা। এটিই মুলত তাদের আয় রোজগারের একমাত্র লক্ষণ। এসব চিত্র এখন যশোরের সবখানে। এদের কারনে প্রকৃত সাংবাদিকরা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন সর্বত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যশোর বিআরটিএ’র একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে আমরা দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। লাইসেন্স প্রস্তুত, নবায়ন, ফিটনেস প্রদান ও নবায়ন করা হয় খুবই দেখে শুনে। নীতিমালার ভিতরে থাকলে আমরা অনুমোদন প্রদান করি। যদি কিছুটা ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে থাকে তাহলে আমরা তাদেরকে সময় প্রদান করি। নির্ধারিত সময়ে যাচাই বাছাই করে ছবি সহকারে ডাটাবেইজে সংরক্ষণ করে থাকি। তারপরও দালাল শ্রেণীর একদল লোক সর্বদা সুযোগ খুজতে থাকে। এসব দালালরাই মুলত নামসর্বস্ব অনলাইন পোর্টাল বা ফেসবুক পেইজের সাংবাদিক। সুযোগ পেলেই উদ্ভট দু-চার কথা লিখে শুরু করেন জ্বালাতন। তাদের মুল উদ্দ্যেশ্য সম্মানের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা। টাকা না দিলে গালিগালাজ পর্যন্ত করে থাকেন।
এমন চিত্র পাসপোর্ট অফিস, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, সড়ক ভবন, এলজিইডি ভবন, বিএডিসি, উপজেলা পরিষদের ভিতর বিভিন্ন কার্যালয়ের সর্বত্র। মান-সম্মানের ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করেন না। প্রতিবাদ করলে শিকার হতে হয় হয়রানির।
বিষয়টি নিয়ে যশোর প্রেসক্লাবের একাধিক সাংবাদিকের কথা বললে তারা জানান, বর্তমানে ব্যাঙের ছাতার মতো অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ফেসবুক টিভি তৈরি হয়েছে। যার নিজস্ব কোন অফিস নেই। এরা বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টার্গেট করে ভিত্তিহীন গুজব রচনা করেন। তারা কি লেখেন তারা নিজেও জানেন না। অখ্যাত আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকা, নিউজ পোর্টাল ও ফেসবুক টিভির কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা হাম্বি-তাম্বি করে বেড়ান। মাঝে মাঝে প্রশাসনের নিকট ধরা খেয়ে মুচলেকা দিয়ে বের হয়ে আবার শুরু করেন।
তারা আরোও বলেন, প্রেসক্লাবের সভায় অপসাংবাদিকতার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হয়েছে। এসব হলুদ সাংবাদিকদের কারনে প্রকৃত সাংবাদিকরা পরিচয় দিতেও লজ্জ্বা বোধ করেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাংবাদিক ও সুশীল সমাজ এসব অপসাংবাদিকতার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাদের দাবি, জেলা প্রশাসন যেন এসব অপসাংবাদিকদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি প্রদান করেন। সাংবাদিক, সুশীল সমাজ ও সাধারন মানুষ এদের হাত থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় প্রশাসনসহ জেলা প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Leave a Reply