অনলাইন ডেক্স :
ঝিনাইদহে অনুষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজিত জুলাই পদযাত্রা ও পথসভায় ‘জুলাই সনদ’ দ্রুত প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিএসএফকে ‘মানবতাবিরোধী বাহিনী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ পৌর শহরের পায়রা চত্বরে অনুষ্ঠিত এ পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রেক্ষাপটে আমরা শহীদ পরিবার, জুলাই যোদ্ধা ও আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা ইনশাল্লাহ জুলাই সনদ আদায় করে ছাড়বো।”
তিনি আরও বলেন, “ঝিনাইদহবাসীর অভূতপূর্ব ভালোবাসা পেয়েছি। জুলাই অভ্যুত্থানকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানা প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। আমরা শহীদ পরিবারের পাশে আছি এবং থাকবো।” এ সময় তিনি সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত বাংলাদেশিদের স্মরণ করে বলেন, “বিএসএফ এখন আর সীমান্তরক্ষী নয়, খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।”
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেন, “আমরা সংস্কার চাই, বিচার চাই, এরপর নির্বাচন। আর কোন ধোঁকাবাজি নয়।”
সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “২০০৪ সালের ২৪ জুলাই আমরা এক খুনি শাসকের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি, কিন্তু শাসনব্যবস্থা থেকে নয়। এখন সময় এসেছে পুলিশ, নির্বাচন কমিশনসহ সব প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার।”
কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব তারেক রেজা বলেন, “স্বৈরাচারী পাগল খুনি জুলাই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল—এ বিষয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক প্রমাণ রয়েছে। এই খুনির বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনও নির্বাচন নয়।”
দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “সংস্কার ও বিচার ছাড়া আমরা নির্বাচন চাই না। যারা বলছে নির্বাচিত হয়ে এসব করবে, তারা জনগণকে আর ধোকা দিতে পারবে না।”
পথসভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটুয়ারি। তিনি বলেন, “আমরা রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত বিচার ও সংস্কার এখনও পাইনি। আমরা ভয় পাই না, আমরা জানি অধিকার আদায় কীভাবে করতে হয়।”
এর আগে বিকালে চুয়াডাঙ্গা থেকে ঝিনাইদহ শহরের জোহান পার্কে এসে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নেতারা। এরপর বিকাল ৬টার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পায়রা চত্বরে পথসভায় গিয়ে শেষ হয়।
মাগরিবের নামাজ শেষে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুরু হয় পথসভা। রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে মানুষ এনসিপি নেতাদের অভ্যর্থনা জানান।
পথসভায় আরও অংশ নেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব তারেক রেজা, ঝিনাইদহ জেলা আহ্বায়ক আবু হুরাইয়া, সদস্য সচিব সাহারিয়ার অভিক, সদর উপজেলা আহ্বায়ক সৌরভ আহম্মেদ শুভ, মহেশপুর উপজেলা আহ্বায়ক হামিদুর রহমান রানা এবং কোটচাঁদপুর উপজেলা আহ্বায়ক হৃদয় আহম্মেদ।
এনসিপির দাবি, ‘জুলাই সনদ’ কেবল একটি দলিল নয়, এটি শহীদদের রক্তের ঋণ শোধের মাধ্যম, যা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
Leave a Reply