কেশবপুর সংবাদদাতা :
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় ২০২৫ সালের দাখিল পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয়ের চিত্র উঠে এসেছে। দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অর্ধেকেরও বেশি ফেল করেছে। এমনকি একটি মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী ফেল করে নজির গড়েছে। অন্যদিকে, এসএসসি ও এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় তুলনামূলক ভালো ফলাফল করেছে শিক্ষার্থীরা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কেশবপুর উপজেলার ১২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ৩,১১৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় ৬৪টি স্কুল থেকে ১,৮৮৮ জন, এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় ১০টি স্কুল থেকে ৪০৯ জন এবং দাখিল পরীক্ষায় ৫১টি মাদ্রাসা থেকে ৮১৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, দাখিল পরীক্ষায় ৮১৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৫৮ জন ফেল করেছে, পাশ করেছে মাত্র ৩৬০ জন। পাশের হার ৪৪ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র ৫ জন শিক্ষার্থী।
অপরদিকে, এসএসসি পরীক্ষায় ১,৩৮৫ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে, পাশের হার ৭৩.৩৫ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৭টি স্কুলের মোট ১৫৯ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে কেশবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ৪৮ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে।
এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় ৩০১ জন শিক্ষার্থী পাশ করেছে, পাশের হার ৭৩.৫৯ শতাংশ। ৫টি স্কুল থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ অর্জন করেছে। এদের মধ্যে হাসানপুর মুক্তিযোদ্ধা কারিগরি স্কুলের ৬ জন রয়েছে।
দাখিল পরীক্ষায় ব্যর্থতার চিত্র আরও ভয়াবহ—বেগমপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ১১ জন শিক্ষার্থীর সবাই ফেল করেছে। তবে বকুলতলা বাজার মহিলা দাখিল মাদ্রাসার তিনজন শিক্ষার্থী সবাই পাশ করেছে।
অভিভাবকরা এই ফলাফল বিপর্যয়ের জন্য মাদ্রাসাগুলোতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে ঘাটতি এবং শিক্ষকদের সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন। গড়ভাঙ্গা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার অভিভাবক সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, “মাদ্রাসার সুপার সপ্তাহে মাত্র একদিন আসেন। প্রায় ৮০০ শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা ফেল করেছে, এটা খুবই দুঃখজনক।”
বুড়িহাটি মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল খালেক বলেন, “এটা শুধু কেশবপুর নয়, সারা দেশেই দাখিলে ফল খারাপ হয়েছে। অন্যান্যবার বোর্ড থেকে নম্বর গ্রেস দেওয়া হতো, এবার সেটা না থাকায় এমন ফলাফল।”
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শেখ ফিরোজ আহমেদ বলেন, “দাখিল পরীক্ষা কেন্দ্রে এবার নজরদারি ছিল কঠোর। ভালো প্রস্তুতি ছাড়া কেউ পাশ করতে পারেনি। ফল বিশ্লেষণ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে দ্রুত মাদ্রাসা সুপারদের নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হবে।”
এদিকে অভিভাবকরা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন, যেন পরবর্তী বছরগুলোতে এমন বিপর্যয় আর না ঘটে।
Leave a Reply