লালমনিরহাট সংবাদদাতা :
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকার সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে চরম অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সড়কটির কাজ শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই প্লাস্টার দেওয়া ইটের দেয়াল ভেঙে পড়ছে পরদিনই। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) একাধিক মৌখিক ও লিখিত সতর্কতা সত্ত্বেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বগুড়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সৈকত এন্টারপ্রাইজ।
এলজিইডি সূত্র জানায়, ভেলাবাড়ি বাজার জিসি থেকে দুর্গাপুর জিসি পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার ২২৫ মিটার দীর্ঘ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় বরাদ্দ হয় ৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। চলতি বছরের ১৭ মার্চ চুক্তি হয়, কাজ শেষ হওয়ার কথা আগস্টের মধ্যে। কিন্তু এখনো অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি।
প্রকল্পে এক নম্বর ইট ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ভাঙা ইট এবং সিমেন্টের বদলে বালুর আধিক্য। প্লাসাইটিংয়ে ইট গাঁথার একদিনের মধ্যেই দেয়াল ভেঙে পড়ছে। স্থানীয়দের প্রতিবাদে কখনো কখনো দেয়াল ভেঙে পুনরায় নির্মাণ করা হলেও ব্যবহার হচ্ছে সেই একই মানহীন ইট।
একজন পথচারী বলেন, “সিমেন্ট তো প্রায় নেই বললেই চলে। শুধু বালু দিয়ে ইট বসিয়ে গাধুনি করছে, পরে মাটি দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে—যাতে খারাপ কাজ আর দেখা না যায়।”
স্থানীয় এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রকল্পটি মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে উচ্চ কমিশনে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল কিনে নিয়েছে। লোকসানের ভয়েই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
প্রকল্পে নিয়োজিত এক ম্যানেজার দাবি করেন, “শ্রমিকদের ভুলে কিছু নিম্নমানের ইট ব্যবহার হয়েছে। পরে আমরা দেয়াল ভেঙে আবার গাধুনি দিয়েছি। কিন্তু পুরনো ইটগুলো ভাটা ফেরত না নেওয়ায় সেগুলোই আবার ব্যবহার করছি।”
প্রকল্পটির উপসহকারী প্রকৌশলী পারভেজ রুবেল বলেন, “ভেঙে পড়া ওয়ালের প্লাসাইটিং বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছি। বাকিগুলোর কিছু কাজ সন্তোষজনক। তবে অনিয়ম প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক বলেন, “প্রথম থেকেই এ প্রকল্পে অনিয়ম হচ্ছে। একাধিকবার মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি, লিখিত চিঠিও দিয়েছি। আবারও চিঠি দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনও ইতোমধ্যে এ প্রকল্প নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিধি অনুযায়ী শিগগিরই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের শঙ্কা, এভাবে কাজ চলতে থাকলে প্রকল্পটি একদিকে যেমন টেকসই হবে না, অন্যদিকে সরকারের কোটি কোটি টাকা ভেস্তে যাবে। এলাকাবাসী দ্রুত তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
সরকারি অর্থ নয়ছয় ও অনিয়ম বন্ধে প্রকল্পটির প্রতি স্থানীয় প্রশাসন এবং দপ্তরসমূহের নজরদারি আরও জোরদার করার দাবি উঠেছে সর্বত্র।
Leave a Reply