অনলাইন ডেক্স :
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাব বিস্তারমূলক কৌশল ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা আলী লারিজানি। শুক্রবার (১১ জুলাই) তেহরানে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, “এখন এমন একটি দৃঢ়, স্বতন্ত্র ও স্বাধীন মধ্যপ্রাচ্য গড়ে উঠছে, যা আর কারও বশ্যতা স্বীকার করছে না।”
আলী লারিজানি বলেন, “ইতিহাসজুড়ে প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তাভাবনা বিশ্বের জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে—দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি তার প্রমাণ। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে যুদ্ধোত্তর বিশ্বে জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের মতো সংস্থা গড়ে তোলা হলেও, আজ এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের অস্তিত্বকেই হাস্যকর করে তুলেছে।”
তিনি সরাসরি ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দায়ী করে বলেন, তারা এক পুরনো সাম্রাজ্যবাদী তত্ত্ব প্রচার করছেন—“ক্ষমতার মাধ্যমে শান্তি”, যা অতীতে হিটলার বা মঙ্গোল শাসকদের দৃষ্টিভঙ্গিকেই মনে করিয়ে দেয়। “তাদের বার্তা পরিষ্কার—‘বশ্যতা স্বীকার করো, না হয় যুদ্ধ করো’। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করেছে, এই চিন্তাধারা কেবল রক্তপাত ও অস্থিতিশীলতাই ডেকে আনে।”
লারিজানি বলেন, “ফিলিস্তিন ও গাজার জনগণ এই চাপের মুখে আত্মসমর্পণ করেনি, বরং অব্যাহত প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। হিজবুল্লাহ এবং হামাসের অস্তিত্ব আজো টিকে থাকার অর্থ—এই প্রতিরোধ সফল।” তিনি আরও বলেন, “যারা একসময় বলেছিল হামাস ধ্বংস হয়ে গেছে, হিজবুল্লাহ আর টিকবে না—তারা আজ ভুল প্রমাণিত।”
ইরান কীভাবে এই পরিস্থিতিতে অবস্থান নিচ্ছে, সে প্রসঙ্গে লারিজানি বলেন, “আমরা আমাদের সর্বোচ্চ নেতার প্রজ্ঞাময় নেতৃত্বে এই চিন্তাধারার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি এবং দেশের ভেতরে এ ধরনের সাম্রাজ্যবাদী তত্ত্ব কখনোই স্থান পায়নি।”
বক্তব্যের শেষদিকে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্য এখন আর আগের মতো বহির্বিশ্বনির্ভর নয়। এটি গড়ে উঠছে প্রতিরোধ, আত্মমর্যাদা এবং স্বাধীনতার ভিত্তিতে। “এই অস্থিরতা জাতিগুলোর কোনো উপকারে আসেনি। বরং সময় এসেছে একটি নতুন, প্রতিরোধমুখী, গণভিত্তিক ও আত্মনির্ভরশীল মধ্যপ্রাচ্য গড়ে তোলার।”
আলী লারিজানির বক্তব্যে স্পষ্ট, ইরান চাইছে মধ্যপ্রাচ্যে বিদেশি প্রভাবের অবসান এবং স্থানীয় জনগণের প্রতিরোধ-ভিত্তিক ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করতে। এটি মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতিতে নতুন বার্তার পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নীতির প্রতি এক সরাসরি চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
Leave a Reply