কল্যান রায় (জয়ন্ত) :
যশোরে কয়েক দিনের টানা বর্ষণে জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি কখনো কখনো তুমুল বর্ষণে রূপ নেওয়ায় শহর ও আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।
শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটে হাঁটুসমান পানি জমে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। শংকরপুর, বেজপাড়া, বারান্দীপাড়াসহ শহরের বিভিন্ন নিচু এলাকায় ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠেছে।
এদিকে জলাবদ্ধতার প্রভাব পড়েছে বাজারঘাটেও। কাঁচাবাজারের অনেক দোকানপাট খোলেনি। এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। রিকশা ও অটোচালকরা নিচ্ছেন অতিরিক্ত ভাড়া। আবার অনেক এলাকায় যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
কৃষিক্ষেত্রেও এই টানা বৃষ্টির বিরূপ প্রভাব পড়েছে। যশোর সদরের চুড়ামনকাটি, বারীনগরসহ মনিরামপুর ও ঝিকরগাছা উপজেলার মাঠের সবজি ক্ষেতে পানি জমে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। ফলে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। সাধারণ মানুষ আশঙ্কা করছেন, এর প্রভাবে সবজির বাজারে দাম আরও বাড়বে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, “প্রতিবার বৃষ্টি হলেই এই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বাসা থেকে বের হতে পারি না, বাচ্চাদের স্কুলেও পাঠানো যায় না।”
অন্যদিকে, প্যারিশ রোডের এক দোকানদার বলেন, “রাস্তার পানি দোকানের ভেতরে ঢুকে পড়ে। গ্রাহক আসতে পারে না, বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়।”
জলাবদ্ধতায় শুধু সাধারণ মানুষই নয়, ভোগান্তিতে পড়েছে জরুরি সেবাও। অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহনের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অনেক রাস্তায় বৃষ্টির পানিতে আটকে পড়ছে যানবাহন।
যশোর শহরের বাসিন্দারা বলছেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুর্বলতা এই ভোগান্তির মূল কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, যশোর শহরের নকশা ও পরিকল্পনায় সঠিকভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এ সমস্যা বারবার ফিরে আসছে। পর্যাপ্ত ও কার্যকর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
ক্ষুব্ধ যশোরবাসী বলছেন, “আমরা নিয়মিত কর দিই, অথচ মৌলিক সেবাগুলোই ঠিকভাবে পাচ্ছি না। ড্রেনেজ উন্নয়ন করা সরকারের দায়িত্ব। জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে প্রতিবার একই কষ্ট ভোগ করা আর মেনে নেওয়া যায় না।”
Leave a Reply