খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :
বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়িতে চলছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মাসব্যাপী শুভ দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষে শুরু হয় এই দানোত্তম উৎসব, যা বৌদ্ধ ধর্ম মতে দানের মধ্যে শ্রেষ্ঠ — “দানোত্তম” নামে পরিচিত।
বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে কঠিন চীবর দান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ধর্মীয় আচার। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী বা প্রবারণা পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস ধ্যান ও সাধনায় নিমগ্ন থাকার পর ভিক্ষুরা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সময়ে কঠিন চীবর গ্রহণ করেন। প্রবারণা পূর্ণিমার পর থেকে কার্তিক পূর্ণিমা পর্যন্ত এক মাসব্যাপী এই উৎসব উদযাপন করা হয়।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো — বছরে মাত্র একবার, এবং কেবল সেই বিহারগুলোতে যেখানে ভিক্ষুরা বর্ষাবাস পালন করেন, সেখানেই এই দান অনুষ্ঠিত হয়।
পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা দুইভাবে এই দান পালন করে থাকেন। কেউ কেউ বিশাখা প্রবর্তিত প্রথায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা তৈরি, রং করা, কাপড় বোনা ও চীবর সেলাই করে দান করেন। আবার কেউ কেউ বাজার থেকে কাপড় কিনে সেলাই করে তা দান করেন।
চীবর তৈরি সম্পন্ন হলে ভিক্ষুরা সীমা ঘরে বৌদ্ধ মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে চীবরকে ধর্মীয়ভাবে ‘কঠিন’ হিসেবে পবিত্র করেন। পরে নর-নারীরা সেই চীবর দান করেন। এ সময় দিনভর চলে ফুলপূজা, সমবেত প্রার্থনা, পঞ্চশীল গ্রহণ, সংঘ দান, অষ্টপরিখকার দান, কল্পতরু দান ও পিণ্ড দানসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
এ বছর খাগড়াছড়ি জেলার ধর্মপুর আর্য বিহার, দীঘিনালা বন বিহার, পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠির, সাধনা টিলা বন বিহারসহ প্রায় ২৫টি শাখা বনবিহার এবং আড়াই থেকে তিন শতাধিক বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব পালিত হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি সদরের দক্ষিণ খবংপড়িয়া আদর্শ বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ নন্দপ্রিয় মহাস্থবির ভান্তে বলেন, “কঠিন চীবর দান হলো বৌদ্ধদের শ্রেষ্ঠ দান। বর্ষাবাস শেষে নর-নারীরা পরিবারের সুখ-শান্তি ও সকল প্রাণীর হিতমঙ্গল কামনায় এই দান করে থাকেন। এটি বুদ্ধের সময় থেকে প্রচলিত, এবং এর দানের ফল অপরিসীম।”
Leave a Reply