কল্যান রায় (জয়ন্ত) :
যশোর সদর উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামে চঞ্চল গাজী নামে এক যুবককে হত্যার ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। রবিবার (১২ অক্টোবর) সকালে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে ডাকাতিয়া গ্রামবাসীর অংশগ্রহণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চঞ্চল গাজী ছিলেন পরিশ্রমী ও সহজ-সরল মানুষ। মাদক ব্যবসা ও ইজিবাইক চুরি নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তারা বলেন, “চঞ্চল হত্যায় জড়িতদের আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি – ফাঁসি নিশ্চিত না হলে আমরা রাজপথে নেমে আসব।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েকদিন আগে ডাকাতিয়া গ্রামের কিছু যুবকের মধ্যে ইজিবাইক চুরি ও মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে চঞ্চল গাজী প্রতিবাদ জানালে রবিউল ইসলাম, তার ছেলে মুন্না ও তাদের সহযোগীরা ক্ষুব্ধ হয়। পরে পরিকল্পিতভাবে চঞ্চলকে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়। স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
চঞ্চলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা অভিযুক্তদের বাড়িঘরে ঘেরাও দিতে চাইলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে এলাকাবাসী শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধনের কর্মসূচি পালন করে।
চঞ্চল হত্যার ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে রবিউল ইসলাম, তার ছেলে মুন্না ও আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে যশোর কোতয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে রবিউল ও মুন্নাকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছে। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছেন। তবে মামলার প্রধান আসামিসহ কয়েকজন এখনো পলাতক। এ অবস্থায় ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বক্তারা অভিযোগ করেন, “বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ গাফিলতি করছে। দেরি হলে তারা প্রভাবশালীদের মাধ্যমে পালিয়ে যাবে।” এসময় বক্তারা আরও বলেন, “চঞ্চল হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব। ডাকাতিয়া গ্রামে এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড আর মেনে নেওয়া হবে না।” তারা দ্রুত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার, আদালতের মাধ্যমে দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এ বিষয়ে যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, “চঞ্চল হত্যা মামলায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আইনের বাইরে কেউ থাকবে না।
চঞ্চলের পরিবার জানায়, নিহত চঞ্চল ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুতে পরিবারটি চরম আর্থিক ও মানসিক সংকটে পড়েছে। পরিবারটি সরকারের সহায়তা কামনা করেছে। চঞ্চল হত্যার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন পুরো ডাকাতিয়া গ্রামজুড়ে শোক ও ক্ষোভের মিশ্র আবহ। এলাকাবাসী বলছে, ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
Leave a Reply