যশোর সংবাদদাতা :
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংখ্যানুপাতিক (পি.আর) পদ্ধতি প্রবর্তন, জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি নিশ্চিতকরণসহ পাঁচ দফা দাবিতে যশোরে বিশাল সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকালে প্রেসক্লাব যশোর’র সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যশোর জেলা সভাপতি মিয়া মুহাম্মদ আব্দুল হালিম এবং সঞ্চালনা করেন জেলা সেক্রেটারি আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী সরদার। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলটির কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা মোহাম্মদ শোয়াইব হোসেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা মোহাম্মদ শোয়াইব হোসেন বলেন, “সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পি.আর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিটি ভোটের মূল্যায়ন নিশ্চিত হবে। এই পদ্ধতিতে পেশিশক্তি, কালো টাকা, সহিংসতা ও ভোট ডাকাতির কোনো সুযোগ থাকে না। জনগণের ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ সৃষ্টি হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের ৯১টিরও বেশি দেশে পি.আর পদ্ধতি চালু রয়েছে। বেলজিয়াম, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও ফিনল্যান্ডের মতো উন্নত দেশগুলো শতভাগ পি.আর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজন করে সুফল পাচ্ছে। বাংলাদেশেও এ পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিভক্তি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসান ঘটবে। দেশ হবে স্থিতিশীল, বিনিয়োগবান্ধব ও কর্মসংস্থানমুখী।”
সভাপতির বক্তব্যে মিয়া মুহাম্মদ আব্দুল হালিম বলেন, “দেশে স্থায়ীভাবে স্বৈরতন্ত্রের অবসান ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন অপরিহার্য। বর্তমান নির্বাচনী পদ্ধতিতে জনগণের আস্থা হারিয়ে গেছে। তাই পি.আর পদ্ধতিই এখন সময়ের দাবি।”
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ এখন পি.আর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। এই দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে বাধ্য করা হবে, অন্যথায় গণআন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আইনজীবী পরিষদের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. নুর ইসলাম (নুরুল), ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা রুহুল আমিন, জয়েন্ট সেক্রেটারি এইচএম মহসিন, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হাফেজ আব্দুর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আশিক বিল্লাহ, প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক ও জাতীয় শিক্ষক ফোরামের জেলা সভাপতি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, দপ্তর সম্পাদক মুফতি মঈন উদ্দিন, অর্থ সম্পাদক এটিএম আখতারুজ্জামান তাজু, ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা ইমদাদুল্লাহ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান মুন্না, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের জেলা সভাপতি আবুল বাশার, ইসলামী যুব আন্দোলনের জেলা সভাপতি মুফতি আবু জর বিন হাফিজ এবং ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সভাপতি মাওলানা ইমরান হোসাইন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৫ দফা দাবি:
১. আগামী জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও তার আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করে গণভোট আয়োজন।
২. জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক (পি.আর) পদ্ধতি চালু করা।
৩. সকল দলের জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করা।
৪. সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা।
৫. স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
বক্তারা বলেন, “ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এ পাঁচ দফা জাতির মুক্তির রূপরেখা। সরকার যদি জনগণের দাবির প্রতি কর্ণপাত না করে, তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমেই পি.আর পদ্ধতির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে।”
Leave a Reply