আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দুই বছর ধরে ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলার কারণে গাজা উপত্যকা পরিণত হয়েছে এক “উন্মুক্ত মাইনফিল্ডে”। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন জানিয়েছে, সমগ্র এলাকা এতটাই বিস্ফোরক দূষণে আক্রান্ত যে, সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকিমুক্ত করতে অন্তত ২০ থেকে ৩০ বছর সময় লাগতে পারে।
সংস্থার বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ নিক ওর বলেন, “গাজার সব অবিস্ফোরিত বোমা সরানো সম্ভব নয়। অনেক বোমা ভূগর্ভে রয়ে যাবে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিপদ ডেকে আনবে।” তিনি জানান, আগামী সপ্তাহ থেকে হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পর্যায়ক্রমে বোমা শনাক্তকরণ কার্যক্রম শুরু হবে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, দুই বছরের সংঘাতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫৩ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে। তবে বাস্তবিক সংখ্যাটি এর চেয়ে অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া আগ্রাসনে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ পর্যন্ত ৬৮ হাজার ২০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩০০-এরও বেশি আহত হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পক্ষ উদ্যোগ নিলেও এখনো ধ্বংসস্তূপ থেকে অবিস্ফোরিত বোমা সরানো শুরু করা যায়নি।
ইসরায়েল রাফা ক্রসিংসহ সীমান্তপথে ত্রাণ ও পুনর্গঠন সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, যার ফলে মানবিক ত্রাণ কার্যক্রম এবং পুনর্গঠন পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজা পুনর্গঠনে প্রয়োজন হবে প্রায় ৬ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ধ্বংসস্তূপ অপসারণেই লাগবে অন্তত ২ হাজার কোটি ডলার। এই অর্থের বেশিরভাগই আসবে বেসরকারি বিনিয়োগ ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সহায়তা থেকে।
হিউম্যানিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন জানায়, গাজা এখন কেবল ধ্বংসস্তূপ নয়, বরং এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত এক অবিস্ফোরিত বোমার ফাঁদে পরিণত হয়েছে। নিক ওরের মতে, “যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তবে ধীরে ধীরে ২০-৩০ বছরের মধ্যে বিস্ফোরক ঝুঁকি হ্রাস সম্ভব।”
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতি গাজার জন্য দীর্ঘমেয়াদি মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। হাসপাতাল, স্কুল ও আবাসিক এলাকাগুলো এখনও অবিস্ফোরিত বোমার ঝুঁকিতে রয়েছে।
দুই বছরের যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ, সীমান্ত অবরোধ, ত্রাণ ও পুনর্গঠনের ব্যাঘাত—সব মিলিয়ে গাজা উপত্যকা এখন এক গভীর মানবিক সঙ্কটে নিমজ্জিত। আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সমন্বিত পুনর্গঠন উদ্যোগ না নিলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই বিপর্যয়ের ভার বইতে হবে।
সূত্র: দ্য আরব নিউজ
Leave a Reply