যশোর সংবাদদাতা :
‘ঘুষ খাননি; দাওয়াত খেয়েছেন, আর পাকা কলা খেয়েছেন’ – এমন দাবি করেও রক্ষা পাননি যশোর জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী আলমগীর হোসেন। দোকান বরাদ্দের নামে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
রোববার দুপুরে যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে তিনি এ আদেশ দেন। ওই শুনানিতে যশোরের ৩৭টি দপ্তরের ৭৫টি অভিযোগের শুনানি ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন ও যশোরের পুলিশ সুপার রওনক জাহান।
গণশুনানির উদ্বোধনী পর্বে দুদক চেয়ারম্যান মজা করে বলেন, ‘খবরে দেখলাম দুদক চেয়ারম্যানের চেয়ারের দাম দুশ কোটি টাকা! আগে শুনতাম চেয়ারের দাম পাঁচ হাজার কোটি—তাহলে তো ৪৮শ’ কোটি টাকা কমেছে!’
এরপর তিনি বলেন, দুর্নীতি পুরোপুরি নির্মূল করা না গেলেও তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব, যদি সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতা উভয়ে সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
শুনানিতে বিআরটিএ অফিসের দালাল চক্র, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা সেবার মান, স্বাস্থ্য বিভাগের ঘুষবাণিজ্য, অগ্রণী ব্যাংকের গ্রাহক টাকার আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ ওঠে।
চেয়ারম্যান এসব বিষয়ে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন—বিআরটিএর সহকারী পরিচালককে দালাল উচ্ছেদে প্রশাসনের সহায়তা নিতে, হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ককে রাতে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে ও আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে।
অগ্রণী ব্যাংকের নয়জন গ্রাহকের প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পিয়ন জসিম উদ্দিনের সম্পদ থেকে টাকা আদায়ে নির্দেশ দেন দুদক চেয়ারম্যান। পাশাপাশি দায়সারা আচরণের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও সতর্ক করেন তিনি।
এছাড়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের উন্নয়নকাজ, নদী দখল ও দূষণ, ভূমি ও স্বাস্থ্য দপ্তরের ঘুষ–অনিয়মসহ নানা বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
চেয়ারম্যান বলেন, “যদি কর্মকর্তারা এমন কাজ করেন যাতে মানুষ তাদের বিদায়ের সময় চোখে পানি আনে, তবে বুঝব তারা জনগণের সেবা করেছেন।”
দিনব্যাপী এই গণশুনানি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। শেষে দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা সকল সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেন।
Leave a Reply