বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ফেসবুকে ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বরের গোয়াইনঘাট যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় স্মরণ করেছে। এই দিনে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে সফল আক্রমণ চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
গোয়াইনঘাট ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি, যা সিলেট-তামাবিল সড়কসহ বৃহত্তর সিলেট ও দক্ষিণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আশুগঞ্জ পর্যন্ত অঞ্চলে কর্তৃত্ব বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পাকিস্তানি সেনারা জাফলং-সিলেট সীমান্তের গোয়াইন নদীর তীরবর্তী এই এলাকা ও আশপাশের অঞ্চলগুলি আয়ত্তে রেখেছিলেন। গোয়াইনঘাট দখল হওয়া সিলেটের প্রতিরক্ষা দুর্বল করার পাশাপাশি রাধানগর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় রসদ সরবরাহের প্রধান পথ ছিল।
মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দুটি কোম্পানি দ্রুতগতিতে মিত্র বাহিনীর একটি ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যৌথভাবে গোয়াইনঘাটের ওপর আক্রমণ চালায়। পাকিস্তানি ৩০ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট ও ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট যুদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়ে সিলেটের দিকে সরে যায়।
ক্যাপ্টেন নবীর নেতৃত্বে ‘এ’ ও ‘ডি’ কোম্পানি এবং গণবাহিনীর একটি কোম্পানি গঠন করে মূল আক্রমণ দল প্রস্তুত করা হয়। ৩ ডিসেম্বর রাত ৩টার পর মুক্তিবাহিনী নিজ নিজ অবস্থান গ্রহণ করে। ঘন কুয়াশার মধ্যে ভোর সাড়ে ৪টায় দক্ষিণপ্রান্ত থেকে সবুজ ফায়ারের সংকেতের সঙ্গে আক্রমণ শুরু হয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও মুক্তিবাহিনীর রিকয়েললেস রাইফেলের আঘাতে তাদের ফায়ার পাওয়ার অর্ধেক কমে যায়।
অবশেষে ২০টি নৌকায় নদী অতিক্রম করে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি অবস্থান দখল করে নেয়। ভোর পৌনে ৬টায় পাকিস্তানি সৈন্যরা পিছু হটতে থাকে। মুক্তিবাহিনী মর্টার ও পরিকল্পিত আক্রমণের মাধ্যমে তাদের বাধা দূর করে এবং অনেক রাজাকারের আত্মসমর্পণ নিশ্চিত করে।
ফেসবুক পোস্টে সেনাবাহিনী উল্লেখ করেছে, “মুক্তিবাহিনীর সাহস, পরিকল্পনা ও বীরত্বের কারণে গোয়াইনঘাট দখল হয় এবং সিলেটের মুক্তি নিশ্চিত হয়।” এই ঘটনা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে ইতিহাসে সমাদৃত।
Leave a Reply