ইরানের ঐতিহাসিক শহর দেহদাশতের গভীরে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এমন এক প্রাগৈতিহাসিক গ্রামের সন্ধান পেয়েছেন, যার বয়স প্রায় ৭ হাজার বছর। এই আবিষ্কার নব্যপ্রস্তর যুগ এবং প্রাথমিক নগরায়ণের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছে। মেহের নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেহদাশতের প্রত্নতাত্ত্বিক খননের প্রধান জাবিহোল্লাহ মাসৌদিনিয়া শনিবার (৬ ডিসেম্বর) এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, ঐতিহাসিক বেলাদশাপুর নগরের মধ্যেই এই প্রাচীন জনবসতির নিদর্শন পাওয়া গেছে, যা খ্রিস্টপূর্ব ৫ম ও ৬ষ্ঠ সহস্রাব্দের সময়কার। মাসৌদিনিয়া বলেন, “এই আবিষ্কার দেহদাশতের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে বহুগুণে বৃদ্ধি করবে।” উল্লেখ্য, ১৯৫৬ সালের আকাশচিত্রে দেহদাশত কারাভানসারার কাছে একটি ঐতিহাসিক ঢিবি দেখা যেত। তবে পরবর্তীতে নগর উন্নয়ন ও নির্মাণকাজের কারণে ঢিবিটি ধ্বংস হয়। বর্তমান খননের মাধ্যমে সেই নব্যপ্রস্তর যুগের গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে।
খনন চলাকালীন উপরের স্তরে মধ্যযুগ ও পরবর্তী ইসলামি যুগের স্থাপত্যের প্রমাণও পাওয়া গেছে। তবে সেই স্তর সরানোর পরই আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাগৈতিহাসিক স্তর, যা খ্রিস্টপূর্ব ৫ম সহস্রাব্দের। খননে মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশসহ সাংস্কৃতিক উপকরণ উদ্ধার হয়েছে, যা এই অঞ্চলের প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে নতুন তথ্য দেবে। বিশেষভাবে নজরকাড়া একটি আবিষ্কার হলো পোড়া পাথরের খণ্ড, যা থেকে বোঝা যায় সে সময়ের মানুষ তরল পদার্থ যেমন দুধ বা পানি গরম করার জন্য বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করতো।
গবেষকদের মতে, বর্তমান দেহদাশতের অনেক রাস্তা, ঘরবাড়ি ও অলিগলি এই প্রাচীন ঢিবির ওপরেই নির্মিত। এছাড়া শহরের উত্তর অংশে প্রাচীন কানাত পানি পরিবহন ব্যবস্থার নিদর্শনও আবিষ্কৃত হয়েছে, যা প্রাচীন পানিবণ্টন ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য বহন করে। এই আবিষ্কার দেহদাশতের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং অঞ্চলের প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতা নিয়ে গবেষণাকে নতুন গতি দেবে।
Leave a Reply