বাংলাদেশের ভূমি প্রশাসন ২০২৫ সালকে বড় পরিবর্তনের বছর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নতুন নীতিমালার আওতায় এমন ১০ ধরনের জমির নামজারি (মিউটেশন) আর কার্যকর থাকবে না; অনেক ক্ষেত্রে নামজারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এতে দেশজুড়ে জমির মালিকানা যাচাই, রেকর্ড সংশোধন ও খতিয়ান আপডেটে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
ভূমি প্রশাসনের এই কঠোর সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হলো জাল দলিল, ভুল দাগ নম্বর, ঘুষ দিয়ে নামজারি, দখলে না থাকা ভূমি নিজের নামে তোলা এবং সরকারি বা সংস্থার জমি ব্যক্তির নামে নামজারি—এই ধরনের অনিয়মের বৃদ্ধি।
নতুন নীতির আওতায় যেসব জমির নামজারি বাতিল হবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১০ ধরণ হলো:
১. চলমান দেওয়ানি মামলার জমি – মামলা চলাকালীন নিজের নামে ঘুষ বা প্রভাব ব্যবহার করে নামজারি করা যাবে না।
২. দখলে না থাকা জমি – প্রকৃত দখল অন্য কারো কাছে থাকলেও নামজারি করা থাকলে তা বাতিল হবে।
৩. অংশের চেয়ে বেশি জমি নামজারি – মালিকানার চেয়ে বেশি জমি নিলে অতিরিক্ত অংশ বাতিল হবে।
৪. ভুল দাগ নম্বর – দলিলে ভুল দাগ নম্বর থাকলে এবং ঘুষ দিয়ে নামজারি করলে তা বাতিল হবে।
৫. অর্পিত সম্পত্তি (Khas/Enemy Property) – সরকারি ও মালিকানা সম্পত্তির ভুল নামজারি বাতিল হবে।
৬. খাস জমি – ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত সরকারি জমি কোনো নাগরিকের নামে নামজারি করা যাবে না।
৭. সরকারি সংস্থার জমি – রেলওয়ে, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক বিভাগের জমি বা অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি নামজারি নিষিদ্ধ।
৮. রেকর্ডবিহীন জমি – সর্বশেষ রেকর্ড না থাকা জমি নামজারি করা যাবে না।
৯. অনলাইন তালিকাভুক্ত নিষিদ্ধ জমি – ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনলাইনে তালিকাভুক্ত জমি নামজারি করলে তা বাতিল হবে।
১০. প্রতারণা, জালিয়াতি বা ঘুষে করা নামজারি – ঘুষ বা প্রভাব দিয়ে করা সব নামজারি বাতিল হবে।
নামজারি বাতিল হলে জমির মালিকানা নিয়ে পুনরায় বিরোধ তৈরি, খাজনা প্রদান বন্ধ, জমি বিক্রি বা হস্তান্তর আটকে যাওয়া এবং ভবিষ্যতে রেকর্ড সংশোধনে বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ভূমি প্রশাসন সতর্ক করেছেন, নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে দলিলের দাগ নম্বর, পরিমাণ ও মৌজা যাচাই, দখল নিশ্চিতকরণ, অনলাইন স্ট্যাটাস পরীক্ষা এবং দলিলের ভুল সংশোধন জরুরি। প্রয়োজনে এসিল্যান্ড অফিসে আপত্তি বা মিস কেস করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply