ফুলবাড়ী, দিঘীপাড়া ও জামালগঞ্জের মতো দেশের বৃহৎ কয়লা মজুত উত্তোলন না করার সিদ্ধান্তকে “বড় ভুল” বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। তবে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এটি সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত মতামত অন্তর্বর্তী সরকারের নীতি নয়। রোববার (৭ ডিসেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।
শফিকুল আলম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা অত্যন্ত জরুরি। সরকারে যোগ দেওয়ার পর বিষয়টি তাঁর কাছে আরও পরিষ্কার হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর ভাষায়, ইউক্রেন যুদ্ধের পর বৈশ্বিক বাজারে এলএনজি এবং তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। “সাধারণত যে দামে এলএনজি কিনতাম, যুদ্ধের পর আমাদের পাঁচ থেকে দশ গুণ দামে কিনতে হয়েছে। সেই দামে কিনে চালানো সম্ভব ছিল না। তখন সামনে ছিল দুটি পথ—রিজার্ভ খরচ করে এলএনজি কেনা, অথবা মাসের পর মাস কারখানা বন্ধ রাখা,” বলেন তিনি।
এই প্রেক্ষাপটেই তিনি মনে করেন, ফুলবাড়ীর মতো বড় মজুত থেকে কয়লা উত্তোলন না করায় বাংলাদেশ কৌশলগত ভুল করেছে। তাঁর মতে, ২০০৬ সালে এশিয়ান এনার্জির সঙ্গে চুক্তি যদি ত্রুটিপূর্ণ হয়ে থাকে, তবে তা সংশোধন করে নতুন অংশীদার খুঁজে নেওয়ার সুযোগ ছিল। “২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৬০০–৭০০ ডলার। তখন আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন ছিল,” যোগ করেন তিনি।
তবে তাঁর সব বক্তব্যই ব্যক্তিগত মতামত এ বিষয়টি তিনি পোস্টে একাধিকবার পরিষ্কার করে বলেন। “আমার জানামতে, এই সরকারের ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত করার কোনো পরিকল্পনা নেই,” মন্তব্য করেন তিনি।
ফুলবাড়ী আন্দোলন প্রসঙ্গে শফিকুল আলম স্মরণ করেন, ২০০৬ সালে তিনি এএফপির সংবাদদাতা হিসেবে হত্যাকাণ্ডের খবর প্রথম প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেন, তখন যেমন নিন্দা জানিয়েছিলেন, আজও তেমনই নিন্দা জানান। তিনি স্বীকার করেন, বহু বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে আন্দোলন দমনে ‘ট্রিগার হ্যাপি’ প্রবণতা তৈরি হয়েছিল, এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সহিংসতার এই চক্র ভাঙতে কাজ করছে।
বামপন্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, মানবাধিকার, সংখ্যালঘু অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে তাদের অবস্থান প্রশংসনীয়। তবে অর্থনৈতিক ইস্যুতে তাদের আন্দোলন অনেক সময় বাস্তবসম্মত ফল বয়ে আনেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর মতে, পোশাকশিল্পে শ্রমিকদের অধিকার, শিশুশ্রম বন্ধ ও নিরাপত্তা উন্নয়নের মতো বড় পরিবর্তন এসেছে মূলত পশ্চিমা ক্রেতা ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলোর চাপের ফল হিসেবে।
ফেসবুক পোস্টে নিজের মন্তব্য নিয়ে হওয়া আলোচনা ও সমালোচনাকে তিনি স্বাগত জানান এবং গঠনমূলক সমালোচনার জন্য সমালোচকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
Leave a Reply