সময় একটি ধ্রুবক, প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিট বা ঘণ্টা সবসময় সমান। তবুও, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সময়ের প্রবাহ কখনো দ্রুত, কখনো ধীরে অনুভূত হয়। বিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এর রহস্য লুকিয়ে আছে আমাদের মস্তিষ্কের প্রক্রিয়াকরণ, আবেগ এবং মনোযোগের মধ্যে।
১. নতুন অভিজ্ঞতা বনাম রুটিন: ‘হলিডে প্যারাডক্স’ অনুযায়ী, নতুন অভিজ্ঞতা আমাদের মস্তিষ্কে বেশি স্মৃতি তৈরি করে। ছুটিতে যাওয়া বা নতুন দক্ষতা শেখার সময় মস্তিষ্ক প্রতিটি মুহূর্তকে মনোযোগ দিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করে। ফলে দিনের শেষে মনে হয়, অনেক কিছু ঘটেছে এবং সময় যেন ধীরে কেটেছে। অন্যদিকে, পরিচিত রুটিনে মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য প্রক্রিয়া করে। খুব কম নতুন স্মৃতি তৈরি হয়, তাই সপ্তাহ শেষ হলে মনে হয় সময় চোখের পলকে চলে গেছে।
২. আবেগের তীব্রতা: আনন্দে সময় দ্রুত অতিক্রম করে। যখন আমরা মজা করি, ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে সময় কাটাই, মনোযোগ থাকে মুহূর্তটির উপভোগে, ফলে সময় দ্রুত কেটে যায়। 반대로 দুঃখ, উদ্বেগ বা যন্ত্রণার সময় মনোযোগ থাকে ঘড়ির দিকে। প্রতিটি সেকেন্ড আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ হওয়ায় সময় ধীরে চলে।
৩. বয়সের প্রভাব: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সময় দ্রুত অনুভূত হয়। একটি ১০ বছর বয়সী শিশুর জন্য এক বছর তার জীবনের দশভাগের এক ভাগ, তাই বছরটি দীর্ঘ মনে হয়। কিন্তু একজন ৫০ বছর বয়সীর জন্য একই বছর জীবনের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ, ফলে দ্রুত কেটে যায়। বয়সের সঙ্গে নতুন অভিজ্ঞতার সংখ্যা কমে যাওয়াও এই অনুভূতিকে বাড়ায়।
৪. মনোযোগের ভূমিকা: ফোকাসড কাজ (যেমন বই পড়া, ভিডিও গেম খেলা) সময়কে দ্রুত অনুভূত করে। মনোযোগহীন বা বিরক্তিকর কাজের সময় ঘড়ির দিকে বারবার তাকাতে থাকি, ফলে সময় ধীর মনে হয়।
শেষ পর্যন্ত, সময় নিজে স্থির থাকলেও, আমাদের মস্তিষ্ক, স্মৃতি, আবেগ, মনোযোগ এবং বয়সের প্রভাবে আমরা সেটিকে পুনরায় ব্যাখ্যা করি। প্রতিদিন নতুন কিছু শেখা, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করা এবং মুহূর্তের প্রতি মনোযোগ দেওয়াই আমাদের জীবনে সময়কে দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ মনে করার উপায়।
Leave a Reply