আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আগামীর লড়াইকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি দুর্নীতির কারণে সমাজ, অর্থনীতি ও জনজীবনে সৃষ্টি হওয়া সংকট তুলে ধরে বিএনপির করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন।
তারেক রহমান লিখেছেন, দুর্নীতি কীভাবে একজন গ্র্যাজুয়েটের চাকরি খোঁজার পথ আটকে দেয়, কৃষকের সাধারণ সেবা পেতে মাসের পর মাস ভোগান্তি বাড়ায়, কিংবা রোগীর পরিবারকে হাসপাতালে দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করে এসবই দুর্নীতির ভয়াবহ বাস্তব চিত্র। তার মতে, মূল্যবৃদ্ধি, শিক্ষার দুরবস্থা, কাঙ্ক্ষিত নিরাপত্তাহীনতা সবকিছুর মূলে একই সমস্যা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নতুন নয়। তবে ইতিহাসে এমন সময়ও ছিল, যখন দেশ এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি করেছে, বিশেষ করে বিএনপির আমলে। তিনি উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা আনায় উদ্যোগ নেন। পরে বেগম খালেদা জিয়ার সময় সরকারি প্রতিষ্ঠান আধুনিকায়ন, কঠোর আর্থিক আইন, স্বচ্ছ ক্রয় নীতি এবং শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ছিল ২০০৪ সালে দুদক গঠন, যা স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ তৈরি করে।
টিআইবির জরিপের বরাত দিয়ে তিনি দাবি করেন, ২০০২-২০০৫ সালে দুর্নীতির পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল, যা সেই সময়কার সংস্কারের প্রমাণ।
তারেক রহমান বলেন, দুর্নীতিবিরোধী লড়াইয়ে বিএনপি তিন দশকে যে রেকর্ড তৈরি করেছে, তার ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও বজায় রাখা হবে। এজন্য তিনি সাতটি অগ্রাধিকারমূলক পরিকল্পনা তুলে ধরেন: ১. প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা: আদালত, দুদক, নির্বাচন কমিশন ও সরকারি সেবা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা। ২. পূর্ণ স্বচ্ছতা: উন্মুক্ত দরপত্র, সম্পদ বিবরণী, রিয়েল-টাইম অডিট ও শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইন। ৩. বিচার ও আইনশৃঙ্খলা সংস্কার: পেশাদার পুলিশিং, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি ও ডিজিটাল প্রমাণ ব্যবস্থাপনা। ৪. ই-গভর্ন্যান্স: লাইসেন্স, জমি ও সরকারি সেবা অনলাইনে এনে ঘুষের সুযোগ কমানো।
৫. হুইসলব্লোয়ার সুরক্ষা: অনিয়ম প্রকাশকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ৬. নৈতিক শিক্ষা: শিক্ষা ব্যবস্থায় সততার চর্চাকে অন্তর্ভুক্ত করা। ৭. আর্থিক নজরদারি: ডিজিটাল ব্যয় ট্র্যাকিং, স্বাধীন অডিট ও সংসদীয় তদারকি জোরদার করা।
পোস্টের শেষে তিনি বলেন, বহু বছরের অব্যবস্থাপনার পর এই লড়াই কঠিন হবে। তবে সৎ নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও জনগণের সমর্থন এক হলে পরিবর্তন সম্ভব আর জনগণ দায়িত্ব দিলে বিএনপি সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।
Leave a Reply