জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রথমবারের মতো কোনো আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষী আদালতে হাজির হয়েছেন। গতকাল সোমবার (৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ আসামি শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক আরশাদ হোসেন সাক্ষ্য প্রদান করেন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেল তার জবানবন্দি রেকর্ড করে।
জবানবন্দিতে আরশাদ হোসেন দাবি করেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। শাহবাগ থানায় কর্মরত অবস্থায় প্রতিদিন কর্মকর্তা ও ফোর্সদের দায়িত্ব বণ্টন, বাইরে থেকে আসা পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন এবং আন্দোলন চলাকালে সমন্বয় বজায় রাখা ছিল তার দায়িত্ব। তিনি বলেন, শাহবাগ এলাকায় আন্দোলনের সময় তিনি প্রতিদিন ২০-২২ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতেন।
৩১ জুলাই ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির সময় হাইকোর্ট মাজার গেট এলাকায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার বর্ণনা দেন তিনি। আরশাদের দাবি, আন্দোলনকারীদের উসকানিমূলক স্লোগান ও পুলিশের ওপর তীব্র চাপের মুখে তিনি দুই আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করেন, যদিও পরে রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তার ওপর হামলার কিছু দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও ভিডিওগুলো ‘এডিট করা’ বলে দাবি করেন তিনি।
জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, ৫ আগস্ট আন্দোলন চরম পর্যায়ে পৌঁছালে কারফিউ জারি হয়। সেনাবাহিনীর নির্দেশে শাহবাগ থেকে পুলিশকে সরে যেতে বলা হলে তিনি থানায় ফিরে আসেন। পরে চানখাঁরপুল এলাকায় রিপোর্ট করতে গেলে গোলাগুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও ইটপাটকেলের কারণে সরাসরি সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। ওই দিন তিনি কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেননি এবং কাউকে আঘাত বা গুলি করেননি বলে দাবি করেন।
আরশাদ আরও বলেন, “আমি যদি অপরাধে জড়িত থাকতাম, পাঁচ মাস কর্মস্থলে না থেকে পালিয়ে যেতাম।” তিনি জানান, তিনি সিআরপিসি, পিআরবি, পুলিশ আইন ও ডিএমপি অধ্যাদেশ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্দোলনকারীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হলেও তিনি কোনো বলপ্রয়োগ করেননি।
মামলাটিতে এই প্রথম আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপন হলো, যা বিচার প্রক্রিয়ায় নতুন মোড় আনতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Leave a Reply