লালমনিরহাট সংবাদদাতা :
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় ঋণের চাপে দিশেহারা হয়ে নিজের ২ বছরের কন্যা সন্তানকে বিক্রির চেষ্টা করেন হাবিবুর রহমান নামে এক দিনমজুর। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) উপজেলার সিন্দুর্না ইউনিয়নের চর সিন্দুর্না গ্রামের ২ নম্বর ওয়ার্ডে এ হৃদয়বিদারক ও চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে।
ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান জানান, তার সংসারে চরম অভাব-অনটন চলছে। সামান্য জমি বর্গা নিয়ে কৃষিকাজ করে জীবন চালান তিনি। গত মৌসুমে ভুট্টা, পেঁয়াজ ও বাদাম চাষ করতে গিয়ে তিনজন সুদের কারবারি ও এক বন্ধুর কাছ থেকে সুদে ৩ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিয়েছিলেন। ফসল বিক্রি করে কিছু ঋণ শোধ করলেও এখনো ৪ লাখ টাকার বেশি পাওনা রয়ে গেছে। প্রতিদিন ঋণদাতাদের চাপ সহ্য করতে না পেরে কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে নিজের কন্যা সন্তান বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমি চেয়েছিলাম মেয়ে বিক্রি করে অন্তত ঋণটা শোধ করবো। খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েকজন আমার বাড়িতে শিশুটিকে কিনতে আসেন।” তবে এই খবর তার স্ত্রীর কানে গেলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং মেয়েকে বিক্রি করতে না দেওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, “আমরা হাবিবুরের স্ত্রীর কান্নাকাটি শুনে তার বাড়িতে যাই। পরে জানতে পারি সে মেয়েকে বিক্রি করতে চায়। আমরা সবাই মিলে বাধা দিলে শেষ পর্যন্ত সে বিক্রির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।”
শিশুটির মা নুরনাহার বলেন, “ঋণের চাপে আমার স্বামী সন্তান বিক্রি করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি কখনোই আমার মেয়েকে বিক্রি হতে দেবো না।”
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি জানার পর ইউপি সদস্য পাঠিয়ে পরিবারটিকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে আনি। ঋণদাতাদের সঙ্গে বসে বিষয়টি মীমাংসার উদ্যোগ নিচ্ছি। সেই সঙ্গে হাবিবুর রহমানের স্ত্রীর নামে ভিজিডি কার্ড করে দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা কিছুটা সহায়তা পায়।”
এ ঘটনা এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রান্তিক কৃষকদের জন্য সহজশর্তে ঋণ ও সরকারি সহায়তা না থাকলে এমন করুণ পরিস্থিতি সামনে আরও বাড়তে পারে।
Leave a Reply