রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন
Title :
পাকিস্তানের বিপক্ষে সহজ জয়ে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য ১১ মিলিয়ন ডলার তহবিল ঘোষণা যুক্তরাজ্য ও কাতারের সরকারি অফিসে হয়রানি উত্তরণে চালু হচ্ছে ‘অ্যাপ’ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর অবস্থান নিতে পারেনি : ইফতেখারুজ্জামান ১৮তম কাউন্সিল অব দ্য কলেজ সভা অনুষ্ঠিত সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ে ৪৮৯ পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত সীমান্তে যুদ্ধাবস্থা নেই অথচ মানুষকে গুলি করে মারা হয় : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বিয়ের গুঞ্জনে পানি ঢাললেন কনা নির্বাচন-গণভোটের প্রস্তুতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করলেন সিইসি তফসিল ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পোস্টার না সরালে ব্যবস্থা

কী হবে যদি পৃথিবী থেকে বিলিয়নেয়ারদের সরিয়ে দেওয়া হয়?

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬.৫০ অপরাহ্ণ
  • ৫৬ বার

বিশ্বজুড়ে সম্পদের অসম বণ্টন নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়, তবে গত এক দশকে তা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে পশ্চিমা বিশ্বের বহু দেশে এখন প্রকাশ্যেই কোটিপতিদের সংখ্যা কমানোর দাবি উঠছে। শুধু নতুন বিলিয়নেয়ার তৈরির প্রবাহ কমানো নয়, বরং অতিধনীদের সম্পদ পুনর্বণ্টনের কথাও আলোচনায় এসেছে জোরালোভাবে। বিশ্লেষকদের মতে, ধনী-গরিব বৈষম্য এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে, যা বিংশ শতাব্দীর শুরুতে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বেও দেখা যায়নি।

এই প্রেক্ষাপটে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান ইলন মাস্ক। ফোর্বসের তথ্য বলছে, ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে মাস্ক শিগগিরই ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি ডলারের বেতন পেতে পারেন। যদি তাই হয়, তবে বৈশ্বিক কোটিপতি তালিকায় তিনি অন্যান্য সকল বিলিয়নেয়ারকে পিছনে ফেলবেন।

বৈশ্বিক কোটিপতির সংখ্যায়ও রেকর্ড গড়েছে এ বছর। বর্তমানে সারা বিশ্বে কোটিপতির সংখ্যা ৩ হাজার ২৮ জন, যাদের সম্মিলিত সম্পদ প্রায় ১৬.১ ট্রিলিয়ন ডলার। বিপরীতে বিশ্বজুড়ে ৮৩১ মিলিয়ন মানুষ প্রতিদিন ৩ ডলারের কম আয়ে চরম দারিদ্র্যে জীবন কাটাচ্ছেন যা বিশ্বব্যাংকের সংজ্ঞায় দারিদ্র্যের সবচেয়ে কঠিন মানদণ্ড। এই পরিসংখ্যান ধনী-দরিদ্র বৈষম্যের তীব্রতা অনিবার্যভাবে সামনে নিয়ে আসে।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের হিসাব আরও চমকে দেওয়া। তাদের মতে, যদি বিশ্বের প্রতিটি বিলিয়নেয়ারের কাছে মাত্র ১ বিলিয়ন ডলার রেখে বাকি সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা যায়, তবে সেই অর্থ দিয়ে পরবর্তী ১৯৬ বছর বিশ্বের চরম দারিদ্র্য দূর করার সম্পূর্ণ ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব।

বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ: অভিশাপ না আশীর্বাদ?

বিলিয়নেয়ারদের সম্পদ বৈশ্বিক রাজনীতি, গণমাধ্যম ও জনমতকে প্রভাবিত করে এ দাবি বহু দিন ধরে সমালোচকদের। তাদের মতে, অতিধনীরা এমন নীতি ও চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করেন, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের স্বার্থের বদলে তাদের নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা করে।

তবে অপরদিকে একটি শক্তিশালী যুক্তিও রয়েছে। বিশাল সম্পদ শিল্প, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও গবেষণাকে এগিয়ে নেয়। এনভিডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠান, যারা এআই বিপ্লবের নেতৃত্ব দিচ্ছে, কিংবা স্পেসএক্স, যারা স্যাটেলাইট যোগাযোগের নতুন যুগ তৈরি করেছে—এগুলোর পেছনে আছে বিলিয়নেয়ারদের উদ্যোগ, ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা এবং বিপুল বিনিয়োগ।

অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউটের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর ম্যাক্সওয়েল মারলো বলেন, “যদি বিলিয়নেয়ার না থাকে, তবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো যে দুঃসাহসিক উদ্যোগ নিত, তা নেওয়ার প্রেরণা থাকত না। আমরা অনেক প্রয়োজনীয় সেবা ও প্রযুক্তির উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হতাম।”

যদি সম্পদ পুনর্বণ্টন করা হয়?

গ্লোবাল সাউথের বহু অর্থনীতিবিদ মনে করেন, মূল প্রশ্ন নতুন কর আরোপ নয় বরং কোথায় এই কর আদায় হবে তা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে, বিলিয়নেয়ারদের সম্পদের উৎস শুধু পশ্চিমা দেশগুলো নয়; এর উল্লেখযোগ্য অংশ গ্লোবাল সাউথের প্রাকৃতিক সম্পদ ও শ্রম থেকে সৃষ্ট।

অ্যান্টওয়ার্পের উদাহরণটি স্পষ্ট। বেলজিয়ামের এই শহরের সমৃদ্ধি অনেকাংশেই দাঁড়িয়ে আছে কঙ্গোর হীরার ওপর—কিন্তু কঙ্গো আজও দারিদ্র্যসঙ্কুল। অর্থনীতিবিদরা বলেন, এটি দান নয়; বরং এক ধরনের কাঠামোগত অন্যায়।

গত কয়েক দশকে ধনীদের ওপর কর কমানো ও মিতব্যয়ী অর্থনীতির নামে বৃহৎ কর্পোরেশনগুলোর জন্য সুবিধা তৈরি করা হয়েছে। অথচ ১৯৪০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে অতিধনীদের ওপর ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত কর আরোপ করা হয়েছিল, এবং সেই টাকায় প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের ‘নিউ ডিল’ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়েছিল যা আমেরিকাকে মহামন্দা থেকে বের করে আনে।

গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্যাক্স জাস্টিসের প্রধান দেরেজে আলেমায়েহুর ভাষায়, “আমাদের কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। শুধু নতুন কর দিয়ে সমাধান হবে না। একই ব্যবস্থায় বৈষম্য আরও বাড়বে, এবং কিছু মানুষ এতটাই ধনী হবে যে রাষ্ট্রের চেয়েও বেশি ক্ষমতাধর হয়ে উঠবে।”

গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ কি বদলে যাবে?

বিলিয়নেয়াররা বড় বড় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান কিনে নেওয়া এখন এক সাধারণ দৃশ্য। জেফ বেজোস ওয়াশিংটন পোস্ট, ইলন মাস্ক টুইটার এখন এক্স। তাদের ক্ষমতা শুধু অর্থনৈতিক নয়, তথ্যপ্রবাহ নির্ধারণেও তারা শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এই মালিকানা তাদের স্বার্থে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা গণমাধ্যমে বিনিয়োগ রাখেন। কিন্তু স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু ঘটলে সমর্থন দ্রুত তুলে নিতে পারেন। এতে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ইলন মাস্কের উদাহরণই যথেষ্ট। অভিযোগ আছে, তিনি এক্স–এর নীতিমালা নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অনুযায়ী পরিবর্তন করছেন এবং প্ল্যাটফর্মটির নিরপেক্ষতা কমছে। গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ মানে তথ্যপ্রাপ্তির পথ নিয়ন্ত্রণ যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি বলে মনে করেন গবেষকেরা।

অতিধনীদের লাগাম টানার প্রশ্ন: ইতিহাস কী বলে?

অসীম সম্পদের সঞ্চয় ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। জন ডি. রকফেলার ছিলেন বিশ্বের প্রথম ‘টাইটানিক ধনী’; কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন সরকার তার একচেটিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে দেয়। তাই অনেকে মনে করেন, আজকের ‘টেক বিলিয়নেয়ার’ যুগও স্থায়ী নয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানামা পেপারস, লাক্সলিকসসহ গোপন সম্পদের তথ্য প্রকাশ হয়ে অতিধনীদের বিষয়ে জনরোষ আরও তীব্র হয়েছে। ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এখন বিলিয়নেয়ার কর আরোপের দাবি পুরোদমে রাজনৈতিক সমর্থন পাচ্ছে।

তবে লড়াই সহজ নয়। ইতিহাস বলে, আয়কর ব্যবস্থার বিরোধিতা একসময় হয়েছিল ‘মার্ক্সবাদী’ বলে; তবুও তা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তাই অনেকেই বিশ্বাস করেন, বিলিয়নেয়ারদের সম্পদের একটি ছোট অংশও যদি পুনর্বণ্টন করা যায়, তবে সমাজে বৈষম্য কমবে এবং ডানপন্থীদের ‘সম্পদ শেষ হয়ে যাবে’ ধরনের প্রচার অনেকটাই প্রশমিত হবে।

শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন একটাই: ভবিষ্যৎ কেমন হবে?

বিশ্ব যদি সত্যিই এমন কাঠামো তৈরি করতে পারে যেখানে সম্পদ অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত না হয়ে সমতায় বণ্টিত হয়, তবে একটি স্থিতিশীল, ন্যায্য এবং পরিবেশবান্ধব অর্থনীতি গড়ে উঠতে পারে। তবে অতিধনীদের বিলুপ্তি বাস্তবসম্মত নয়—এমনটা মনে করেন বহু অর্থনীতিবিদ।

তবে তারা একমত যে কাঠামোয় বিলিয়নেয়ার তৈরি হয়, সেটি বদলানোই হবে সমাধানের প্রথম ধাপ।

Please Share This Post in Your Social Media

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

Footer Widget

Footer Widget

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© 2019, All rights reserved.
Design by Raytahost.com