ইউরোপে পৌঁছানোর পথে ভূমধ্যসাগরের বিপজ্জনক জলপথ পাড়ি দিতে গিয়ে আরও একবার প্রাণহানি ঘটেছে। গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের কাছে একটি আধাভাসা নৌকা থেকে কমপক্ষে ১৭ জন অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে দেশটির কোস্টগার্ড। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ক্রিটের দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় ২৬ নটিক্যাল মাইল (৪৮ কিলোমিটার) দূরে এই মৃতদেহগুলো পাওয়া যায়। খবর দিয়েছে আল জাজিরা।
গ্রিস কোস্টগার্ডের একজন মুখপাত্র এএফপিকে জানিয়েছেন, মৃতরা সবাই পুরুষ এবং তারা তরুণ। নৌকাটির দুই পাশে অতিরিক্ত সংখ্যক যাত্রী বসানোর কারণে তাদের খুব কম জায়গায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়।
এই ঘটনায় দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হলেও তারা গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। উদ্ধার হওয়া জীবিতরা কোস্টগার্ডকে জানিয়েছেন, খারাপ আবহাওয়ার কারণে নৌকাটি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছিল। পর্যাপ্ত খাবার, পানি বা শীত থেকে রক্ষার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি উদ্ধার হওয়ার সময়ও নৌকাটিতে পানি ঢুকে ডুবে যাচ্ছিল। মৃতদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে, যা নিশ্চিত করবে তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।
তুরস্কের একটি কার্গো জাহাজ প্রথমে নৌকাটিকে লক্ষ্য করে গ্রিক কর্তৃপক্ষকে খবর দেয়। এরপর গ্রিস কোস্টগার্ড দ্রুত দুটি উদ্ধারযান পাঠায়। উদ্ধার তৎপরতায় ইউরোপীয় সীমান্তরক্ষী সংস্থা ফ্রন্টেক্সও অংশ নেয়।
আল জাজিরা জানিয়েছে, গত এক বছরে ক্রিট দ্বীপ অভিবাসীদের জন্য ইউরোপে পৌঁছানোর নতুন পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে ১৬ হাজার ৭৭০ জনের বেশি আশ্রয়প্রার্থী ক্রিটে পৌঁছেছেন।
এ ধরনের বিপজ্জনক সমুদ্রপথ পাড়ি দেওয়ার প্রবণতার পেছনে মূল কারণ লিবিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা। ২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, যা ইউরোপে পৌঁছানোর জন্য অভিবাসীদের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথ বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
গ্রিসের রক্ষণশীল সরকার গত জুলাই মাসে অভিবাসীদের আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়ার শুনানি স্থগিত করেছে, ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এই মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি আবারও ইউরোপে অভিবাসন ও মানবাধিকার সংক্রান্ত সমস্যার গুরুতর প্রতিফলন দেখাচ্ছে।
Leave a Reply