রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে মা ও মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে লায়লা আফরোজ (৪৮) এবং তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজের (১৫) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নতুন গৃহকর্মী আয়েশাকে (২০) প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
চার দিন আগে কাজ শুরু করা আয়েশা সেদিন সকালে বোরখা পরে বাসায় প্রবেশ করলেও দুই ঘণ্টা পর বের হন স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে। ওই সময়টিকেই হত্যাকাণ্ডের সময় হিসেবে ধারনা করছে পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের পরদিনও স্পষ্ট কোনো কারণ জানাতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা। তবে ঘটনাস্থলের নৃশংসতা ও হত্যার ধরন দেখে এটিকে পরিকল্পিত এবং প্রশিক্ষিত ঘাতকের কাজ বলে মনে করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায়, নিহত লায়লা আফরোজের শরীরে মোট ৩০টি জখমের চিহ্ন রয়েছে। বাম গাল, থুতনি, গলা, হাত, বুক, পেট—শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার মেয়ে নাফিসার গলায় চারটি গভীর ক্ষত ও বুকে চারটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তাদের মৃত্যু হয়।
এ ধরনের সুরতহাল সাম্প্রতিক সময়ে দেখেননি বলে মন্তব্য করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তাদের ধারণা, ভয়ঙ্কর দক্ষতা ছাড়া এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব নয়।
মোহাম্মদপুর থানায় আয়েশাকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার রাতে ময়নাতদন্ত শেষে মা–মেয়ের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হত্যার আগে ও পরে গৃহকর্মীর গতিবিধি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, “হত্যার ধরন দেখে মনে হচ্ছে, ঘাতক প্রশিক্ষিত। হত্যার পর সে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয় এবং মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বের হয়ে যায়—সব মিলিয়ে পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। খুব দ্রুত আসামিকে গ্রেপ্তার করে নেপথ্যের কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।”
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে শোক ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। পুলিশ বলছে, ঘটনার পুরো প্রেক্ষাপট উন্মোচনে সব ধরনের অনুসন্ধান চলছে।
Leave a Reply