যশোর সংবাদদাতা :
যশোরের ভবদহ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি নদীর ৮১.৫০০ কিলোমিটার পুনঃখনন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে ভিডিও কলে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
ভিডিও কলে তিনি বলেন, “ভবদহ অঞ্চলের মানুষের জলাবদ্ধতার কষ্ট লাঘবে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এটি একটি গভীর সঙ্কট, তাই কয়েকটি সমন্বিত প্রকল্পের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খোঁজা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছয়টি নদী খননের মাধ্যমে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি সমস্যার সমাধান করা হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।”
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও জানান, জনগণের দাবিকে গুরুত্ব দিয়েই সেনাবাহিনীকে নদী খননের কাজে যুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয়দের মতামত ও সহযোগিতা নিয়েই পরবর্তী প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, “খুব শিগগিরই ভবদহ অঞ্চলের জন্য আরও একটি নতুন প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।” আগামী ডিসেম্বরে তিনি এলাকা পরিদর্শনে আসবেন বলেও উল্লেখ করেন।
ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নদী পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মামুন উর রশিদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক বিএম আব্দুল মোমিন, পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি, মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না এবং কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, জামায়াত নেতা গাজী এনামুল হক ও সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ প্রমুখ।
সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মামুন উর রশিদ বলেন, “ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসন একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। এই অঞ্চলের ছয়টি নদী খননের মাধ্যমে পানি অপসারণ করা হবে। পাশাপাশি সমন্বিত প্রকল্পও গ্রহণ করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে জনগণকে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে। তবে এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প পরিচালক বিএম আব্দুল মোমিন বলেন, “ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। গুজবের বিপরীতে ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের জন্য মোট বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩৪ কোটি টাকা। তাই ‘হাজার কোটি টাকার প্রকল্প লুটপাটের’ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, “ভবদহের মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি চায়, সরকারও এ বিষয়ে আন্তরিক। এজন্য ৬টি নদী খনন ও আমডাঙ্গা খাল খননসহ দু’টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তবে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) নিয়ে এখনও পক্ষে-বিপক্ষে মতামত রয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সমাধান খুঁজতে হবে।”
অনুষ্ঠান শেষে ভবদহ স্লুইসগেট সংলগ্ন এলাকা থেকে মাটি কাটার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে খনন কাজের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। এর আগে টিআরএম প্রকল্প নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কিছু উত্তেজনা দেখা দিলে কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি জানান, ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে ভবদহ অঞ্চলের টেকা নদী ৭ কিলোমিটার, হরি নদী ১৫ কিলোমিটার, তেলিগাতি ৫ কিলোমিটার, আপারভদ্রা ১৮.৫০০ কিলোমিটার, হরিহর ৩৫ কিলোমিটার ও শ্রী নদী ১ কিলোমিটারসহ মোট ৮১.৫০০ কিলোমিটার নদী পুনঃখনন করা হবে।
তিনি আরও জানান, অচিরেই ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে আমডাঙ্গা খাল খনন প্রকল্পের উদ্বোধনও অনুষ্ঠিত হবে।
Leave a Reply